দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের অভিজাত আবাসিক এলাকা রিচমন্ড। টেমস নদীর কোল ঘেঁষা এই এলাকাটিতে ধনী-প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। শুধু ধনী-প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এখানে থাকেন না, থাকেন অনেক পলাতক প্রবাসীও। লিবিয়ার সাবেক একনায়ক গাদ্দাফির একটি বাড়ি ছিল রিচমন্ডে। মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবেরদের বাড়ি আছে এখানে। এখানেই একটি অভিজাত বাড়িতে থাকেন তারেক রহমান। গত দু’মাস আগে রিচমন্ডেই আরেকটি বাড়ি নিয়েছেন তারেক রহমান। এটি অবশ্য তাঁর থাকার জন্য নয়, ব্যক্তিগত অফিসের জন্য। ইংল্যান্ডে বিএনপির নেতাকর্মীরা এর নাম দিয়েছে লন্ডনের হাওয়া ভবন।
কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনিতে ঘেরা এই বাড়িতে তারেক রহমানের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বস্তরা কাজ করেন। এরা অনেকেই হাওয়া ভবনের কর্মী ছিলেন। লন্ডনে বসবাসরত বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ এখানে আমন্ত্রিত না হলে আসতে পারেন না। এই অফিসে গবেষণার কাজ হয় বলে জানালেন স্থানীয় বিএনপির একজন নেতা। তাঁর মতে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে এখানে। ওই নেতা কয়েকবার এই ভবনে গিয়েছিলেন। প্রথমবার গিয়েছিলেন তারেক রহমানের ডাকে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ওই প্রবাসী বিএনপি নেতা জানালেন, এখানে ১২ টি কম্পিউটার আছে। আছে নিজস্ব সার্ভার। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের সমস্যার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছিল।

লন্ডনের অভিজাত এলাকা রিচমন্ড।
বিএনপি’র অন্য এক সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা, কে তাঁদের পক্ষে, কে বিপক্ষে তার ডাটাবেস এখানে তৈরি হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তালিকা, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের তালিকা রয়েছে এখানে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কাজকর্মও এখানে মনিটরিং করা হয় বলে জানা গিয়েছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, বাংলাদেশ বিএনপির রাজনীতি নির্ধারিত হয় এখান থেকেই। এখান থেকে যে নির্দেশনা পাঠানো হয়, সেটাই ঢাকায় কার্যকর করা হবে।
যদিও ইংল্যান্ডে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই গোপন ভবনটি নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পূর্ব লন্ডনের অলগেটে বিএনপির একটি কার্যালয় আছে। ঢাকার বিএনপি আফিসের মতো এই অফিসটিও জনমানবশূণ্য থাকে। তারেক রহমান কোনওদিন ওই কার্যালয়ে যাননি। তারেক রহমান বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করেন না। একজন বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘লন্ডনে বিএনপি’র একটি অফিস থাকতেও কেন আরেকটা হাওয়া ভবন সেখানে তৈরি করা হল-সেটিই প্রশ্ন।’’
একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, ঢাকা’র হাওয়া ভবনের আদলে এখানেও শুরু হয়েছে মনোনয়ন বাণিজ্য আর চাঁদাবাজি।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে, তারেক জিয়া গুলশানের একটি বাড়িতে অফিস করেছিলেন। যেটি হাওয়া ভবন নামেই পরিচিত। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ওই হাওয়া ভবনই হয়ে উঠেছিল ক্ষমতার কেন্দ্র। হাওয়া ভবন থেকেই দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মহোৎসব করেছিল বিএনপি তার পাঁচ বছরের শাসনকালে।