গিনেস বুকে নাম তোলার জন্য গোটা পৃথিবী জুড়ে কত মানুষই না কত কি করছে। পাহাড় থেকে ঝাপ, আগুনে ঝাপ, মৌমাছির কামড়, ভিমরুলের কামড় কত কি! এগুলোর প্রত্যেকটারই ব্যক্তিগতভাবে হয়তো গুরুত্ব অপরিসীম, কিন্তু যখন এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় যাতে আমাদের পরিবেশ সুন্দর হয়, পৃথিবীতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে, তখন তা হয়ে ওঠে সার্বজনীন।
সম্প্রতি এরকমই একটি উদ্যোগ নিল মধ্যপ্রদেশ সরকার। ১২ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নর্মদা নদীর দুই তটে ছয় কোটি চারা গাছ রোপন করার কর্মসূচী। গত ২ জুলাই সকাল সাতটা থেকে গাছ লাগানো শুরু হয়, চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। নর্মদার উত্তর ও দক্ষিণ তট বরাবর রাজ্যের ২৪টি জেলায় সমানভাবে গাছ লাগানো হয়। সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, আমলা, বিভিন্ন জেলার স্থানীয় প্রশাসন, ছাত্র-ছাত্রী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অগুনতি সাধারণ মানুষ এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। সকলের একটাই উদ্দেশ্য সবুজ এবং সুন্দর মধ্যপ্রদেশ।
মধ্যপ্রদেশ পর্যটন বিকাশ নিগমের চেয়ারম্যান তপন ভৌমিক জানান, নর্মদা মধ্যপ্রদেশের ‘লাইফ লাইন’। ফলে নর্মদার স্বাভাবিকত্ব এবং পবিত্রতা বাজায় রাখাকে মধ্যপ্রদেশের প্রতিটি মানুষ নিজের ধর্ম বলে মনে করেন। কোনও হিমবাহ থেকে নর্মদার উৎপত্তি হয়নি। বর্ষার জলই নর্মদার প্রধান উৎস। নর্মদার দুই তটে প্রচুর গাছ রয়েছে। সেই সব গাছের শিকড় থেকে সারাবছর জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে নর্মদায় এসে পড়ে। ফলে নদীর নাব্যতা স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু ইদানীং নানা কারণে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। নর্মদার নাব্যতা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছিল। তাই রাজ্য সরকার এই রকম একটি কর্মসূচী গ্রহণ করার কথা ভাবনা চিন্তা করে।
বৃক্ষরোপণ করছেন তপন ভৌমিক।
তপনবাবু আরও বলেন, ২ জুলাই ১২ ঘণ্টায় ছয়’কোটির বেশি গাছ লাগানো সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে যেমন রয়েছে নিম, শাল, সেগুন, বাঁশ তেমনি রয়েছে আম, আমলকি, সবেদা, জামরুলের মতো ফলের গাছও। নর্মদার তটে যে সব ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে, সেখানে যাতে গাছ লাগাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সরকার একটি পরিকল্পনাও নিয়েছিল। এই ধরনের প্রতি হেক্টর জমিতে ফলের চারা লাগানোর জন্য সরকার বছরে কুড়ি হাজার টাকা দেবে, আর চারা গাছ সরকারই দেবে। কেবলমাত্র গাছ লাগিয়েই সরকারের দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না। গাছগুলি যাতে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বেড়ে ওঠে তার জন্য তিন বছর ধরে এই টাকা সরকার দেবে। সারা বছর গাছের ফল বেঁচে যা আয় হবে তা ঐ জমি মালিকের।
মধ্যপ্রদেশ সরকারের নাম হয়তো গিনেস বুকে উঠল, তবে তার থেকে বড় প্রাপ্তি ঐ ছয় কোটির মতো চারা গাছ। যা ভবিষ্যৎয়ে হয়তো রাজ্যের চেহারাটাই বদলে দেবে। এই ধরনের প্রয়াসকে সত্যিই সাধুবাদ জানাতে হয়।